যাকাত    

যাকাতরে গুরুত্ব ও ফজিলত

যাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদতহল সালাত ও যাকাত। কুরআন মজীদে বহু স্থানে সালাত-যাকাতের আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ ছওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۝۱۱۰

তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। -সূরা বাকারা : ১১০

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۝۵۶

তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’-সূরা নূর : ৫৬

সূরা নিসার ১৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য ‘আজরুন আযীম’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-

وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوةَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۠۝۱۶۲

এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’

অন্য আয়াতে যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-

خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ۝۱۰۳

তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’-সূরা তাওবা : ১০৩

যাকাত আদায় না করার শাস্তি

যারা যাকাত আদায়ে উদাসীনতা দেখায় এবং কৃপণতা করে তাদের বিষয়ে কুরআনে করীমে কঠিন হুমকি এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ ٣٤ يَوۡمَ يُحۡمَىٰ عَلَيۡهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكۡوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمۡ وَجُنُوبُهُمۡ وَظُهُورُهُمۡۖ هَٰذَا مَا كَنَزۡتُمۡ لِأَنفُسِكُمۡ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمۡ تَكۡنِزُونَ ٣٥﴾ [التوبة: ٣٤، ٣٥]

আর যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর’’। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩৫, ৩৬]

যে সম্পদের যাকাত দেওয়া হয় না, তা অবশ্যই তা গচ্ছিত মাল যদ্বারা তার মালিককে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ، لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا، إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ، فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ، فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِينُهُ وَظَهْرُهُ، كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيدَتْ لَهُ، فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ، فَيَرَى سَبِيلَهُ، إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ، وَإِمَّا إِلَى النَّارِ»

সোনা রূপার মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করে, তবে কিয়ামতের দিন এ ধন সম্পদকে আগুনের পাত বানানো হবে এবং জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে। তারপর এগুলো দ্বারা তার পার্শ্ব, ললাট ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। যখনই ঠাণ্ডা হবে পূণরায় তা উত্তপ্ত করা হবে -এমন দিন যেদিনের পরিমাণ দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে। এভাবে বান্দার পরিণতি জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তি চলতে থাকবে”।[1]

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট, গরু ও ছাগলের মালিকদের বিষয়ে আলোচনা করেন যারা তাদের পশুর যাকাত আদায় করে না। তিনি তাদের জানিয়ে দেন যে, নিশ্চয় তাদেরকে কিয়ামতের দিন যাকাত না দেওয়ার কারণে শাস্তি দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا، فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ – يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ – ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ»

যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এ যাকাত আদায় করে নি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় মালা পরিয়ে দেওয়া হবে, সাপটি তার মুখের দুই পার্শ্ব কামড় দিয়ে বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ”।[2]

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার বাণী তিলাওয়াত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا يَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَبۡخَلُونَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ هُوَ خَيۡرٗا لَّهُمۖ بَلۡ هُوَ شَرّٞ لَّهُمۡۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِۦ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ ١٨٠﴾ [ال عمران: ١٨٠]

আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮০]

যাকাতের আভিধানিক অর্থ: যাকাত শব্দের যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্র করা, বৃদ্ধি পাওয়া (বস্তুত যাকাত দিলে মাল পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পায়।)

পারিভাষিক অর্থ: কোন সচ্ছল গরীব মুসলমানকে বা মুসলমানদেরকে কোন প্রকার বিনিময় ও অর্থ ছাড়া যাকাতের মালের চল্লিশ ভাগের এক অংশের মালিক বানানো।

(আদদূরুল মুখতার:২/২৫৬)

ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় জীবন যাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন পুরণের পর সম্পদে পূর্ণ এক বছরকাল অতিক্রম করলে ঐ সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ আল্লাহর নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলা হয়।

নিজের অর্থ সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ অভাবী মিসকিনদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়াকে যাকাত বলে। এটাকে যাকাত বলার কারণ হল এভাবে যাকাত দাতার অর্থ সম্পদ এবং তার নিজের আত্মা পবিত্র -পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। যাকাতের শরয়ী অর্থই তো, আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে কোন মালদার ব্যক্তি কর্তৃক কোন হকদার ব্যক্তিকে তার মালের নির্ধারিত অংশ অর্পন করা।

কত হিজরিতে যাকাত ফরজ হয়?

২য় হিজরীতে যাকাত ফরজ হয়েছে।

কাদরে উপর যাকাত ফরজ?

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে আর তা হলো

(১) মুসলিম হওয়া

(২) বালিগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া

(৩) বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া

(৪) স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া, নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা

(৫) সম্পদের ওপর পূর্ণ মালিকানা

(৬) সম্পদ বর্ধনযোগ্য হওয়া

(৭) সম্পদ একবছর অধিকারে থাকা

(৮) সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া

(৯) ঋণমুক্ত হওয়া

(১০) মুকমি হওয়া মুসাফির না হওয়া

নেসাবের পরিমাণ

নিসাবের পরিমাণ কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমতুল্য সম্পদ বা অর্থ [১]। ঐ পরিমাণ সম্পদ কারো নিকট পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী থাকলে তার উপরে যাকাত ফরজ হয়। যাকাত দিতে হয় চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ২.৫ % [১]।

যাকাত কোথায় দিবেন:

কোথায় এবং কাকে যাকাত দিবেন তার পূর্ণ বিবরণ দিয়েছে ইসলাম। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। সুরা তওবার ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যাকাত কেবল ফকির, মিসকিন ও যাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের জন্য অর্থাৎ নও মুসলিম, দাস মুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির জন্য, আল্লাহ পাকের রাস্তায় জিহাদকারী এবং মুসাফিরদের জন্য।

 ঋণগ্রস্থের যাকাত

সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্থ হয় তাহলে তার সম্পদের মূল্য থেকে প্রথমে ঋণ পরিমাণ টাকা বাদ দিতে হবে । অতঃপর যদি অবশিষ্ট সম্পদ সারে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য (৫০হাজার) বা তার চেয়ে বেশী হয়, তাহলে তার ওপর যাকাত আবশ্যক হবে, নতুবা হবে না । কেউ যদি কিস্তিতে কিছু ক্রয় করে থাকে, বা কিস্তি করা ঋণ থাকে , তাহলে এই বৎসর যে পরিমাণ কিস্তি আদায় করতে হবে কেবল মাত্র সেই পরিমাণ টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদের যাকাত দিতে হবে । আদ্দুররুল মুখতার :২/২৬৩

পাওনা টাকার ওপর যাকাত

যদি কারো কাছে টাকা ঋণ দেয়া থাকে বা কারো কাছে গচ্ছিত রাখা থাকে অথবা কোন কিছু বিক্রয় করেছে কিন্তু তার মূল্য এখনো হস্তগত হয়নি এবং উক্ত টাকা ফেরত পাওয়ার আশা থাকে । তাহলে তা হিসাব করে যাকাত দিতে হবে । শামী: ২/৩০৫

পক্ষান্তরে কারো কাছে টাকা পাওনা থাকলে এবং সে দরিদ্র হলেও তার টাকা যাকাতের নিয়তে মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না । বরং টাকা ফেরত নিয়ে তাকে আবার যাকাতের নিয়তে দিতে হবে ।

শেয়ার, প্রাইজবন্ড ও সঞ্চয়পত্রে যাকাত

শেয়ার, বৈদেশিক মুদ্রা, প্রাইজবন্ড বা সঞ্চয়পত্রও নগদ টাকার মতই । তাই এগুলোর মূল্য হিসাব সকরে যাকাত দিতে হবে । তবে এগুলো থেকে কেউ সুদপ্রাপ্ত হলে তার পূর্ণটাই সদকা করে দিতে হবে ।- ফাতাওয়ায়ে উসমানী : ২/৪৮-৭১

ব্যাংক ও বীমার টাকার যাকাত

ব্যাংকে রাখা টাকা এবং বীমায় দেয়া প্রিমিয়াম যা ফেরৎ পাওয়া যাবে তা হিসাব করে যাকাত দিতে হবে ।-ফাতাওয়ায়ে উসমানী : ২/৭১

প্রভিডেন্ট ফান্ড

ঐচ্ছিক কর্তনকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও হিসাব করে যাকাত দিতে হবে । অবশ্য বাধ্যতামূলকভাবে যে পরিমাণ টাকা কর্তন হয় তা হস্তগত হওয়ার পূর্বে যাকাত নেই । ফাতাওয়ায়ে উসমানী : ২/৫০

ব্যবসার কোন্ কোন্ পণ্যে যাকাত দিতে হবে

ক. ব্যবসার সম্পদে নগদ ক্যাশ বা পাওনা টাকা ।

খ. বিক্রয় করার জন্য মজুত করা বা উৎপাদিত পণ্য।

গ. প্রক্রিয়াধীন পন্য ও কাঁচামাল । যেমন, পোশাকের ফেক্টরীর কাপর, জুতার কারখানার চামড়া, রেক্সীন ইত্যাদি ।

ঘ. এমন জিনিস যা বিক্রি করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়েছে এবং সে ইচ্ছা এখনো বিদ্যমান আছে । যেমন, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমি, বাড়ি, ফ্লাট. ফ্ল্যাট, প্লট, ধান, আলু, পিয়াজ ইত্যাদি । ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফার্নিচার বা বিক্রয়ের জন্য নয় এমন কোন কিছুতেই যাকাত নেই । যেমন, মার তৈরী মেশিন, আলমারী ইত্যাদি । ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/১২২

ভবিষ্যতে কোন কাজের উদ্দেশ্যে জমা রাখা টাকার উপর যাকাত

ভবিষ্যতে হজ্জ, বিবাহ, গৃহ নির্মাণ কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি উরেদ্দশ্যে জমাকৃত টাকা, ঐ উদ্দেশ্যে ব্যয় করে ফেলার পুর্বে বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেলে সেগুলোর ওপরও যাকাত আবশ্যক হবে । [ ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া : ৩/ ৪৯৩ ]

যাকাত কাকে দেয়া যাবে

ক. দরিদ্র অর্থাৎ যার কাছে নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত সারে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য (৫০ হাজার টাকা) পরিমাণ কোন সম্পদ নেই, তাকে যাকাত দেয়া যাবে । কিন্তু যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে কোন ধরনের সম্পদ সারে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য পরিমাণ (৫০ হাজার টাকা ) থাকে চাই তার ওপরে যাকাত আসুক বা না আসুক তাকে যাকাত দেয়া যাবে না ।

খ. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যার ঋণপশোধের কোন ব্যবস্থা নেই ।

গ. মুসাফির যার কাছে সফর কালের প্রয়োজনীয় অর্থ নেই । যদিও তার বাড়িতে সম্পদ থাকে না কেন ।

ঘ. মাদ্রাসার গোরাবা ফান্ডে যাকাত দেয়া যায় । এতে দ্বিগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। কেননা এফান্ডে যাতকাত দিলে একদিকে যাকাত আদায় হয় অপর দিকে দ্বীনের সহযোগিতা হয় ।- [সূরা তাওবা :৬০ ]

উল্লেখ্য, মসজিদে বা মাদ্রাসার সাধারণ ফান্ডে কিংবা নির্মাণ ফান্ডে যাকাত দেয়া যাবে না । অনুরূপ কোন ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজেও যাকাত দেয়া যাবে না । – [আলমগীরী : ১/১৮৮ ]

যেসব সম্পদে যাকাত নেই

পূর্বে উল্লেখিত যাকাত যোগ্য সম্পদগুলো ছাড়া অন্য কোন সম্পদ

তা যত মূল্যবানই হোক না কেন, তাতে যাকাত আসবে না । যেমন

ক. হীরা, মুক্তা বা মূল্যবান পাথর পদার্থ যা ব্যবসার জন্য নয় । ।

খ. ব্যাবহারের কাপড় চোপড় ।

গ. ব্যবহারের আসবাবপত্র । যেমন, ডেক পাতিল, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি ।

ঘ. মিল ফ্যাক্টরী বা কারখনার মেসিনপএ , মাল রাখার পাএ ।

ঙ. একাধিক বাড়ি ,গাড়ি নিজের ব্যবহার বা ভাড়া দেয়ার জন্য হলে ।

চ. ভাড়ায় খাটানো আসবাব প্এ ।

ছ . থাকার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত প্লট বা ফ্ল্যাট ইত্যাদি । কিন্তু জিনিসগুলো যদি করো মালিকানায় প্রয়োজনাতিরিক্ত থাকে এবং তার মূল্য সারে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্য পরিমান (50000)হয় তাহলে সে দরিদ্র হলেও যাকাত গ্রহন করতে পারবে না ।

পোলট্রি র্ফামের যকাত

ক. পলট্রি ফার্মে যে সকল মুরগি বা ডিম সরাসরি বিক্রির উদ্দেশ্যে থাকে তার মূল্যের ওপর যাকাত প্রদান করতে হবে । কিন্তু যে সকল লেয়ার মুরগি ডিম উৎপাদনের জন্য রাখা হয় , সরাসরি বিক্রয়ের জন্য নয় , সেগুলোর মূল্যের ওপর যাকাত আসবে না । [ আদ্ দূররুল মুখতার : ২/২৭৩-২৭৪ ]

মৎস খামারের যাকাত

কেউ যদি পুকুর বা হাউজ ইত্যাদিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে মাছ বা মাছের পোনা ক্রয় করে ছারে তাহলে সেগুলোরও বাজার মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে । [ দুররুল মুখতার । ২/২৭৩-২৭৪ ]

গরুর ফার্ম

ক. শুধু দুধ বিক্রির উদ্দেশ্যে করা হলে গরুর মূল্যের ওপর যাকাত আসবে না ।

খ. গরু সরাসরি বিক্রি করা উদ্দেশ্য হলে তার মূল্যমানের ওপর যাকাত আবশ্যক হবে । -[ দূররুল মুখতার ]। ২/২৭৩-২৭৪

ফসলের যাকাত তথা উসর

আমাদের দেশে যেসকল জমিন সেচ বৃষ্টি বা নদীর পানিতেই সম্পন্ন হয় এবং সেচ কাজে ডিপটিউবয়েল বা অন্য কোন খরচ না লাগে তাহলে ফসল যে পরিমানই হোক তার দশ ভাগের এক ভাগ । যদি ডিপটিউবয়েলের মাধ্যমে সেচ দিতে হয় তাহলে বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দেওয়া উচিৎ । একে উসর বা নিসফে উসর বলা হয় উল্লেখ্য উসর আদায়ের ক্ষেত্রে সার , সেচ ও জমি চাষের খরচ বাদ না দিয়ে পূর্ণ ফসলের দশ ভাগের কিংবা বিশ ভাগের এক ভাগ উসর আদায় করতে হবে । -[ হেদায়া : ১/২০১-২০২ ]

হারাম মালের উপর যাকাত

সুদ বা এজাতীয় হারাম মাল সম্পূর্ণটাই মালিকের কাছে পৌছে দিতে হয় কিংবা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হয় । তাই এর ওপর যাকাতের প্রশ্নই আসতে পারে না । -[ শামি : ২/২৯১ ]

যেসব আত্নীয় স্বজনদের যাকাত দেয়া যায় না

ক. নিজ পিতা – মাতা, দাদা – দাদি, নানা-নানি, অর্থাৎ যাকাত দাতার সকল পিতৃকুল ও মাতিৃকুলের সকল ঊর্ধ্বতন নারী-পুরুষকে যাকাত দেয়া যবে না ।

খ. স্বীয় ঔরসজাত ছেলে- মেয়ে , নাতী- নাতনি, পরনাতি-পরনাতনি , অর্থাৎ নিজের অধস্তন সকল নারী-পুরুষকে যাকাত দেয়া যাবে না ।

গ. স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে দিতে পারবে না । এছাড়া অন্য সকল দরিদ্র আত্নীয় সজনকে যাকাত দেয়া যাবে । যেমন , ভাইবোন , চাচা-ফুফু , মামা-খালা শ্বমুর-শাশুড়ি , সৎ মা-সৎ বাবা , জামাতা , পুত্রবধূ ইত্যাদি । -[ হেদায়া : ১/২০৬ ]

আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপরোক্ত মাসআলাগুলোর ওপর আমল করার তওফীক দান করুন

[ আমীন ]

Leave a Reply