সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্থ হয় তাহলে তার সম্পদের মূল্য থেকে প্রথমে ঋণ পরিমাণ টাকা বাদ দিতে হবে । অতঃপর যদি অবশিষ্ট সম্পদ সারে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য (৬৩ হাজার) বা তার চেয়ে বেশী হয়, তাহলে তার ওপর যাকাত আবশ্যক হবে, নতুবা হবে না । কেউ যদি কিস্তিতে কিছু ক্রয় করে থাকে, বা কিস্তি করা ঋণ থাকে , তাহলে এই বৎসর যে পরিমাণ কিস্তি আদায় করতে হবে কেবল মাত্র সেই পরিমাণ টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদের যাকাত দিতে হবে । আদ্দুররুল মুখতার :২/২৬৩
পাওনা টাকার ওপর যাকাত
যদি কারো কাছে টাকা ঋণ দেয়া থাকে বা কারো কাছে গচ্ছিত রাখা থাকে অথবা কোন কিছু বিক্রয় করেছে কিন্তু তার মূল্য এখনো হস্তগত হয়নি এবং উক্ত টাকা ফেরত পাওয়ার আশা থাকে । তাহলে তা হিসাব করে যাকাত দিতে হবে । শামী: ২/৩০৫
পক্ষান্তরে কারো কাছে টাকা পাওনা থাকলে এবং সে দরিদ্র হলেও তার টাকা যাকাতের নিয়তে মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না । বরং টাকা ফেরত নিয়ে তাকে আবার যাকাতের নিয়তে দিতে হবে ।
শেয়ার, প্রাইজবন্ড ও সঞ্চয়পত্রে যাকাত
শেয়ার, বৈদেশিক মুদ্রা, প্রাইজবন্ড বা সঞ্চয়পত্রও নগদ টাকার মতই । তাই এগুলোর মূল্য হিসাব সকরে যাকাত দিতে হবে । তবে এগুলো থেকে কেউ সুদপ্রাপ্ত হলে তার পূর্ণটাই সদকা করে দিতে হবে ।- ফাতাওয়ায়ে উসমানী : ২/৪৮-৭১
ব্যাংক ও বীমার টাকার যাকাত
ব্যাংকে রাখা টাকা এবং বীমায় দেয়া প্রিমিয়াম যা ফেরৎ পাওয়া যাবে তা হিসাব করে যাকাত দিতে হবে ।-ফাতাওয়ায়ে উসমানী : ২/৭১
প্রভিডেন্ট ফান্ড
ঐচ্ছিক কর্তনকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও হিসাব করে যাকাত দিতে হবে । অবশ্য বাধ্যতামূলকভাবে যে পরিমাণ টাকা কর্তন হয় তা হস্তগত হওয়ার পূর্বে যাকাত নেই । ফাতাওয়ায়ে উসমানী : ২/৫০
ব্যবসার কোন্ কোন্ পণ্যে যাকাত দিতে হবে
ক. ব্যবসার সম্পদে নগদ ক্যাশ বা পাওনা টাকা ।
খ. বিক্রয় করার জন্য মজুত করা বা উৎপাদিত পণ্য।
গ. প্রক্রিয়াধীন পন্য ও কাঁচামাল । যেমন, পোশাকের ফেক্টরীর কাপর, জুতার কারখানার চামড়া, রেক্সীন ইত্যাদি ।
ঘ. এমন জিনিস যা বিক্রি করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়েছে এবং সে ইচ্ছা এখনো বিদ্যমান আছে । যেমন, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমি, বাড়ি, ফ্লাট. ফ্ল্যাট, প্লট, ধান, আলু, পিয়াজ ইত্যাদি । ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফার্নিচার বা বিক্রয়ের জন্য নয় এমন কোন কিছুতেই যাকাত নেই । যেমন, মার তৈরী মেশিন, আলমারী ইত্যাদি । ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/১২২
ভবিষ্যতে কোন কাজের উদ্দেশ্যে জমা রাখা টাকার উপর যাকাত
ভবিষ্যতে হজ্জ, বিবাহ, গৃহ নির্মাণ কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি উরেদ্দশ্যে জমাকৃত টাকা, ঐ উদ্দেশ্যে ব্যয় করে ফেলার পুর্বে বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেলে সেগুলোর ওপরও যাকাত আবশ্যক হবে । ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া : ৩/ ৪৯৩
যাকাত কাকে দেয়া যাবে
ক. দরিদ্র অর্থাৎ যার কাছে নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত সারে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য (৬৩ হাজার টাকা) পরিমাণ কোন সম্পদ নেই, তাকে যাকাত দেয়া যাবে । কিন্তু যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে কোন ধরনের সম্পদ সারে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য পরিমাণ (৬৩ হাজার টাকা ) থাকে চাই তার ওপরে যাকাত আসুক বা না আসুক তাকে যাকাত দেয়া যাবে না ।
খ. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যার ঋণপশোধের কোন ব্যবস্থা নেই ।
গ. মুসাফির যার কাছে সফর কালের প্রয়োজনীয় অর্থ নেই । যদিও তার বাড়িতে সম্পদ থাকে না কেন ।
ঘ. মাদ্রাসার গোরাবা ফান্ডে যাকাত দেয়া যায় । এতে দ্বিগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। কেননা এফান্ডে যাতকাত দিলে একদিকে যাকাত আদায় হয় অপর দিকে দ্বীনের সহযোগিতা হয় ।-সূরা তাওবা :৬০
উল্লেখ্য, মসজিদে বা মাদ্রাসার সাধারণ ফান্ডে কিংবা নির্মাণ ফান্ডে যাকাত দেয়া যাবে নবা । অনুরূপ কোন ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজেও যাকাত দেয়া যাবে না । -আলমগীরি : ১/১৮৮
যেসব সম্পদে যাকাত নেই
পূর্বে উল্লেখিত যাকাত যোগ্য সম্পদগুলো ছাড়া অন্য কোন সম্পদ যা যত মূল্যবানই হোক না কেন, তাতে যাকাত আসবে না । যেমন
ক. হীরা, মুক্তা বা মূল্যবান পাথন পদার্থ যা ব্যবসার জন্য নয় । ।
খ. ব্যাবহারের কাপড় চোপড় ।
গ. ব্যবহারের আসবাবপত্র । যেমন, ডেক পাতিল, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি ।
ঘ. মিল ফ্যাক্টরী বা কারখনার মেসিনপএ , মাল রাখার পাএ ।
ঙ. একাধিক বাড়ি ,গাড়ি নিজের ব্যবহার বা ভাড়া দেয়ার জন্য হলে ।
চ. ভাড়ায় খাটানো আসবাব প্এ ।
ছ . থাকার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত প্লট বা ফ্ল্যাট ইত্যাদি । কিন্তু জিনিসগুলো যদি করো মালিকানায় প্রয়োজনাতিরিক্ত থাকে এবং তার মূল্য সারে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্য পরিমান (৬৩০০০/=)হয় তাহলে সে দরিদ্র হলেও যাকাত গ্রহন করতে পারবে না ।
পোলট্রি র্ফামের যকাত
ক. পলট্রি ফার্মে যে সকল মুরগি বা ডিম সরাসরি বিক্রির উদ্দেশ্যে থাকে তার মূল্যের ওপর যাকাত প্রদান করতে হবে । কিন্তু যে সকল লিয়র মুরগি ডিম উৎপাদনের জন্য রাখা হয় , সরাসরি বিক্রয়ের জন্য নয় , সেগুলোর মূল্যের ওপর যাকাত আসবে না । আদ্ দূররুল মুখতার : ২/২৭৩-২৭৪
মৎস খামারের যাকাত
কেউ যদি পুকুর বা হাউজ ইত্যাদিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে মাছ বা মাছের পোনা ক্রয় করে ছারে তাহলে সেগুলোরও বাজার মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে । দুররুল মুখতার । ২/২৭৩-২৭৪
গরুর ফার্ম
ক. শুধু দুধ বিক্রির উদ্দেশ্যে করা হলে গরুর মূল্যের ওপর যাকাত আসবে না ।
খ. গরু সরাসরি বিক্রি করা উদ্দেশ্য হলে তার মূল্যমানের ওপর যাকাত আবশ্যক হবে । -দূররুল মুখতার ।২/২৭৩২৭৮
ফসলের যাকাত তথা উসর
আমাদের দেশে যেসকল জমিন সেচ বৃষ্টি বা নদীর পানিতেই সম্পন্ন হয় এবং সেচ কাজে ডিপটিউবয়েল বা অন্য কোন খরচ না লাগে তাহলে ফসল যে পরিমানই হোক তার দশ ভাগের এক ভাগ । যদি ডিপটিউবয়েলের মাধ্যমে সেচ দিতে হয় তাহলে বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দেওয়া উচিৎ । একে উসর বলা হয় । উল্লেখ্য উসর আদায়ের ক্ষেত্রে সার , সেচ ও জমি চাষের খরচ বাদ না দিয়ে পূর্ণ ফসলের দশ ভাগের কিংবা বিশ ভাগের এক ভাগ উসর আদায় করতে হবে । -[ হেদায়া : ১/২০১-২০২ ]
হারাম মালের উপর যাকাত
সুদ বা এজাতীয় হারাম মাল সম্পূর্ণটাই মালিকের কাছে পৌছে দিতে হয় কিংবা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হয় । তাই এর ওপর যাকাতের প্রশ্নই আসতে পারে না । -[ শামি : ২/২৯১ ]
যেসব আত্নীয় স্বজনদের যাকাত দেয়া যায় না
ক. নিজ পিতা – মাতা, দাদা – দাদি, নানা-নানি, অর্থাৎ যাকাত দাতার সকল পিতৃকুল ও মাতিৃকুলের সকল ঊর্ধ্বতন নারী-পুরুষকে যাকাত দেয়া যবে না ।
খ. স্বীয় ঔরসজাত ছেলে- মেয়ে , নাতী- নাতনি, পরনাতি-পরনাতনি , অর্থাৎ নিজের অধস্তন সকল নারী-পুরুষকে যাকাত দেয়া যাবে না ।
গ. স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে দিতে পারবে না । এছাড়া অন্য সকল দরিদ্র আত্নীয় সজনকে যাকাত দেয়া যাবে । যেমন , ভাইবোন , চাচা-ফুফু , মামা-খালা শ্বমুর-শাশুড়ি , সৎ মা-সৎ বাবা , জামাতা , পুত্রবধূ ইত্যাদি । -[ হেদায়া : ১/২০৬ ]